এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি কবরস্থানের একদম শেষ প্রান্তের সেই আবছা অবয়বটির দিকে। মনে হচ্ছে একটু একটু এদিক-সেদিক নড়ছে। টর্চ লাইট খানা শক্ত করে ধরে আছি, সেদিকে আলো জ্বালবার আর সাহস হয়নি।___
প্রত্যেকটি কবরস্থানের সামনেই ছোট্ট একটু খালি জায়গা রাখা থাকে মানুষজন গিয়ে দাঁড়ানো এবং সমবেত হয়ে দোয়া পড়ার জন্য।
আমার নানু বাড়ি এর বিপরীত পাশেই একটা কবরস্থান, মাঝে একটা পাকা রাস্তা এইটুকুই। আত্মীয়ের মৃত্যুতে চারদিকে শোকের ছায়া। এমতাবস্থায় রাতে লাশ বাহী ফ্রিজিং গাড়িটা রাস্তার পাশে, কবরস্থানের দেয়াল ঘেঁষে রাখা। রাতের তখন ৩ টা বেজে ৩০ মিনিট, আমি আর সাথে এক ভাগ্নে, বসে বসে দেখভাল করছি, একা তো আর রেখে ভিতরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া যাবেনা।
হঠাৎই ভাগ্নের হাতের টর্চের আলো কবরস্থানের শেষ প্রান্তে পড়তেই সে আতকে উঠলো, দ্বিতীয়বার আবার আলো জ্বেলে আমাকে ইশারা দিয়ে কিছু একটা বুঝাইতে চেষ্টা করলো, আমি এসবে তেমন একটা বিশ্বাস করিনা কিন্তু তাও কিছুটা খটকা লেগেই ছিল যে সৃষ্ট অবয়বটা কি। হোক সেটা কোনো মানুষ, গাছ, আসবাবপত্র, পশু-পাখি কিংবা অন্যকিছু, কিন্তু সেটা কি তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বারবার তাকাচ্ছি আর ভাগ্নের ভয়ার্ত চেহারা দেখছি।
হঠাৎ মামাকে পেলাম আশেপাশে, ওনি শুনতেই একরাশ হেসে বলে উঠলো, "এসব কিছু নেই, চলো একটু ভিতরের দিকে যায় তাহলেই স্পষ্ট বুঝতে পারবে।" ভাগ্নে এরুপ সমাধানের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। একটু এগিয়ে গিয়ে টর্চ দিতেই দেখা গেলো কবরস্থানের শেষ প্রান্তের বিপরীত দিকেও বেশ কিছু দালানকোঠা গড়ে উঠেছে, সেগুলোর কোনো একটা হতে আলোর রশ্মি কিছুটা বাধা পেয়ে এসে পড়ছিল আর বৃষ্টি আসার আগ মুহূর্ত বিধায় বাতাসে সে উৎসটা বেশ নড়তেছিল।
কি থেকে কি, এদিকে সেই বেচারার রাতে বাইরে থাকার সখ মিটে গিয়েছে।
লেখাটা যখন পড়তে শুরু করেছিলাম মনে করেছিলাম ভৌতিক কোন কিছু একটা হবে😂। এরকম ঘটনা আমরা সচরাচর গ্রামের বাড়িতে গেলে শুনতে পাই। ধরুন আপনারা যদি এটা অনুসন্ধান করতে না যেতেন তাহলে এটা একটা ভৌতিক গল্প হয়েই রয়ে যেত।
হ্যা, একদম তাই।
যদিও আমি ভেবেছিলাম যে কেউ একজন হয়তো কোনো কাজ করছে কারণ সেদিন দুজন মারা গিয়েছিলো একই এলাকায়। কিন্তু আমার ভাগিনা বেশ আঁতকে উঠেছিল, যাইহোক তেমন কিছুই ছিলনা।
বেশিরভাগ ভৌতিক গল্প হয়তো এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।
হ্যাঁ। হয়তোবা বেশিভাগ ভৌতিক গল্প সৃষ্টি এভাবেই হয়েছে কিন্তু তার মাঝেও হয়তো কিছু ঘটনা সত্যি ও ছিল যদিও এর বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমি কখনো এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়নি।
আমিও সম্মুখীন হয়নি এবং হতেও চাই না।
তবে এসব কাহিনী শুনতে বেশ ভালোই লাগে।