ছোটবেলায় বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়ার আগে সব সময় বলতাম এখন বৃষ্টি হলে অনেক ভালো হতো। তাহলে আজ আর স্কুলে যাব না।শুধু স্কুলেই যেতে চাইতাম না তাছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে দাদুর সাথে আম কুড়াতে যেতাম। অনেকসময় কচুপাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টিতে ঘুরে বেড়াতাম।
বৃষ্টিতে ভেজার তেমন একটা শখ নেই বললেই চলে। কিন্তু বছরে পাঁচ ছয় বারের মত বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোই লাগে। আবার কোন বছরে বৃষ্টিতে ভিজতে পারি নি এমন রেকর্ড আছে। এখন বর্ষাকাল এলেই আমার ফাতেমা আপুর কথা মনে পড়ে।আপুর কথা কি বলব! বিকেল ৪ টায় আমি বই পড়ছিলাম আর আপু রান্না করছিল। তখনই আপু বৃষ্টির আওয়াজ শুনতে পেয়ে বেলকনিতে যায় আর দুহাত ভরে বৃষ্টির পানি এনে আমার মুখে ছিটে দিতে লাগল।
আপু বলতে লাগলো -রান্না কেমন হবে জানিনা। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ আমি নষ্ট করতে পারব না। এই কথা বলে পাঁচতলা থেকে দৌড়ে দৌড়ে সিঁড়ি থেকে নেমে আপু বৃষ্টিতে ভিজতে ছিল। আর বার-বার বলছিল রুমমেট নিচে নেমে আসো আমরা বৃষ্টিতে ভিজি। আমি জানালার পর্দা সরিয়ে আপুর আনন্দ উপভোগ করছিলাম। তবে আমার খারাপ লাগছিলো।
কেননা তখন বসে বসে বই পড়তে হচ্ছিল পরের দিন পরীক্ষা ছিল দেখে বৃষ্টিতে ভেজা সাহস পায়নি। প্রায় এক ঘন্টা পর আপু রুমে এসে বৃষ্টিতে ভেজার গল্প শুরু করলেন। তাই আমি বলতে লাগলাম থাক আপু আজ আর আপনার বৃষ্টিতে ভেজার গল্প শুনবো না আমি নিজে দেখেছি আপনি অনেক আনন্দ করেছেন।
আর সে সময় বর্ষাকাল ছিলো বলে প্রতিদিনই বৃষ্টি হতো।
এজন্য দু-একবার ক্লাসে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ফিরে আসতে হয়েছিল। মাঝেমধ্যে আমি ছাতা ব্যাগে রেখেই বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসতাম। আবার মারিয়ার সাথে যখনই বৃষ্টিতে ভিজতাম হঠাৎ করে বৃষ্টি থেমেই যেত। তারপর আমরা দুজনে সিঁড়িতে বসে গল্প করতাম।
রুমে গিয়ে দেখতাম ফাতেমা আপু পিয়াজু বানিয়েছে বাহ বেশ ভালোই হয়েছিল। তাই আমি বললাম আপু আপনার হাতের এক কাপ চা হলে বিকেলের আড্ডা টা অনেক ভালোই জমে। একথা শুনে আপু বলল তুমি আজ চা বানাবে আর আমরা সবাই আড্ডা দিব। আমি হেসে বলতে লাগলাম ব্যাপার না এখন আমি অনেক ভালো চা বানাতে পারি। এদিকে শাওন লুডু খেলার কথা বলছিল শামীমা আপু লুডু খেলতে পছন্দ করে না। আমরা হাজার বার বলার পরও আপুকে খেলার জন্য রাজি করাতে পারি নাই।
শেষমেশ আমরা তিনজনই লুডু খেলতে বসলাম। আমাদের এদিকে একটু মেঘের গর্জন হলেই বিদ্যুৎ চলে যায় একটা মোমবাতি ও ঘরে ছিল না। হঠাৎ জানালার কাচ ভাঙার শব্দ শুনতে পেলাম আর তখনই ফাতেমা ভূতের গল্প শুরু করল। আমি বেশ বুঝতে পারছি আপু আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। এরপর কোন মতে বৃষ্টি থেমে গেলেই আবার বিদ্যুত চলে আসে তাই মাঝরাতে অব্দি গল্প করার পর আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
এরপর দুদিন ভালোই গরম পড়েছিল হঠাৎ আবার বৃষ্টি শুরু হল আর আপু বলতে লাগলো আজ আর কারো বাহানা শুনবো না চলো আমরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজতে যাই। আমি বলে উঠলাম বৃষ্টিতে ভিজলে আমার ঠান্ডা লাগে। তখনই আপু আমার টেবিলের ওপর একগাদা ঔষুধ রেখে বললো -এবার হয়েছে? আমি কোন উপায় না পেয়ে আপুর সাথে ভিজতে গেলাম।আমরা ভিজতে ভিজতে আমতলা অব্দি যাই তারপর মাটিতে পড়ে থাকা অনেকগুলো আম কুড়িয়ে এনেছিলাম।
সত্যি গত বছর বর্ষার কথা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে। আর এ বছর শুধু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখেছি আগের বারের মতো আর ভেজার সুযোগ হয়নি। তবে এখন সকালে উঠলে ছোটবেলার মতো বলি না বৃষ্টি এলে বড্ড ভালো হতো।
Congratulations @niha! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!