"ashaa" কথাটির জন্য জীবনে অনেক নিরাশা হয়েছে। "আশা"কথাটা আমার জীবনের সাথে খাপখায়না হয়তো। এছাড়াও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের কাছে আশা শব্দটি ধোয়াশা মাত্র। যতোবার যতোকিছুর প্রতি আশা করে থেকেছি, প্রায় সবগুলোতেই হতাশ এবং নিরাশ দুটোই পাশে থেকেছে। জীবনে সবথেকে বড় কষ্ট পেয়েছি, নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে কেনোকিছু আশা করে। আসলে একজন আরেকজনের প্রতি অনেক আশা আকাঙ্খা থেকেই থাকে, যদি তার বিশ্বাসের মানুষ সে হয়ে থাকে। সেই যায়গায় যদি কেউ তার কাছে আশা করে হতাশ হয়, এটা সত্যিই অতি দূঃখজনক। ঠিক এমন ভাবেই হতাশ হয়েছি আমি। অনেকে যেটা আশা করে, তার জীবনে সেটায় পায়, সেটাই হয়। আমার ঠিক উল্টো। জীবনে যেগুলো আশা করিনি, সেগুলোই প্রায় পেয়েছি।
নিজের আপন চাচা। ছোটবেলা থেকে কাকার সাথে সম্পর্ক অনেকটা ফ্রিলি সিস্টেম, তবে খুব বেশি না, ভালোই বলা যায়। কাকার একটি দোকান রয়েছে বাজারে, দোকানে ঔষুধ, ফটোকপ, ছবিতোলা এই তিনরকমের ব্যবসা হয়ে থাকে। তখন আমি স্কুলে পড়তাম, ছোটমানুষ। তবে, কম্পিউটার চালাতে পারদর্শী তখন থেকেই, বিভিন্নভাবে শিখেছি আর কি। কাকা তখন কম্পিউটারের 'ক' ও বুঝে না। তবে শেখার জন্য কিনেছে এবং ব্যবসার জন্য। যাই হোক, আমি তখন ও খুব ভালো টাইপিং করতে পারতাম, রমযানের একটা সময়, বাজারের কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের প্রশ্ন ছাপানোর কাজ হাতে নেয়। কাজটা আমার মাধ্যমে কম্পিউটারে করে নিয়ে ছেপে দিবে। কাকা আমাকে কিছু একটা অফার দিলো, এই প্রশ্নগুলো তুমি টাইপ করে কমপ্লিট করে দাও ১৫ দিনে। ঈদে তোমাকে একটা ছোট ভালো এনড্রয়েড ফোন দিবো। তখন আমার কাছে ছোট বাটন ফোন, এন্ড্রয়েড ফোনের কথাশুনে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অনেক খুশি, খুশিতে খুশিতে সকালে দোকানের চাবি নিয়ে গিয়ে দোকান খুলে লেখালেখি শুরু। কাকা ঘুমটুম পেরে দুপুরের দোকানে আসে, আমি মনেযোগ দিয়ে সময় অপচয় না করে লেখালেখিতে ব্যাস্ত। কাকা দুপুরে হোটেলে খাবার খাওয়ায় আমায়। যাই হোক, সবগুলো প্রশ্ন টাইপ করতে প্রায় ২০ দিন লেগে যায় আমার। ঐটা প্রশ্ন নয়, সাজেশন্স ছিলো। অনেক বেশি লেখালেখি করা লাগতো। প্রচুর সময় দিতে হয়েছে আর মাঝেমাঝে অস্থির বোরিং লেগেছে। তবুও মোবাইলের 'আশার' কথা চিন্তা করে, কষ্ট করে লিখেছি।
অবশেষে কাকা ঈদের আগে ফোন দেওয়ার কথা, কিন্তু কাকা বললো ঈদ পর দিবে, টাকার নাকি খুব প্রয়োজন তখন। আচ্ছা বেশ, ঈদের ৪ দিন পর আম্মুর মাধ্যমে বলালাম, কাকা বললো কয়েকটাদিন অপেক্ষা করতে, আশা করে থাকলাম। এদিকে আমার ঘুম হয়না, শুধু ফোনের স্বপ্ন দেখি। কখন ফোন হাতে পাবো, কখন এন্ড্রয়েড ফোন চালাবো। অপরদিকে কাকা আমাকে আশার বানি দিয়েই যাচ্ছে। আমি ছোটমানুষ, ঐভাবে চাইতেও । কাকা এভাবেই আশা দিয়ে যায়, যাই হোক, একদিন নিজের মুখফুটে কাকাকে বললাম কাকা আর কয়দিন? কাকা বললো, একটা কাজ করো, এইযে এখন প্রশ্নগুলো ছাপাও শুধু, সাজেশন যেগুলো লিখছো সেগুলোর ভিতর থেকে প্রশ্ন ছাপাও, এইকয়টা কাজ করো, আমি তোমাকে এরভিতরে ফোনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আর তোমার জন্য একটা শার্ট আর জুতা কিনে দিবোনি। একটু মন খারাপ করেই আবার বিরক্তিকর কাজগুলো করা শুরু করলাম। কাজ শেষ। কাকাক বললাম। কাকা বললো, এইযে ধরো ৫০০ টাকা, এটা দিয়ে শার্ট কিনিও আর এইযে ২০০ এটা দিয়ে একটা জুতা কিনিও। ফোনের কথা আর উঠলো না। মনে করছে, টাকা দিয়েছি এখন এই খুশিতে হয়তো ফোনের কথা ভুলে গেছে। আর মি যে ফোনের জন্য রাত বি রাত স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি এটা কাকার মাথায় হয়তো আসেইনি। মনে মনে অনেক বেশি কষ্ট পেতে শুরু করি। নিজের কাকা, কিছু বলতেও পারিনা। মাঝেমাঝে একটু দোকানেও বসতে হয়। মনে অনেক রাগ জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে রাগ থেকে অভিমানের সৃষ্টিহয়। কাকার দোকানে আর বসিনা, ঐদিকেও যাই না। নিজেকে খুব ছোট আর কেমন জানি একটা খারাপ লাগা কাজ করতো। কাউকে বুঝাতেও পারিনা। এভাবে কাকার কাছে বারবার আশা কোনোকিছুর প্রতি আশা করে থেকে ঠকেছি। আব্বুকেও ফোনের কথা বলতে পারিনা, তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি। আব্বু ফোনের কথা শুনলে খুব রাগ হয়। অপরদিকে ফোনের প্রতি খুব নেশা আমার। যাই হোক, এইছিলো আমার জীবনে নিজের মানুষের প্রতি আশা করে কাজ কর্ম করে দিয়েও ফল না পাওয়া হতাশা। আর মানুষ যেটা বলে, বেশি আশা করে থাকলে নাকি সেটা পূরণ হয়না। এটাই হয়েছিলো।
এভাবেই নিজের মানুষকে বিশ্বাস আর ভালোবেসে অনেক কিছু করে দিয়েও ফলস্বরুপ নিরাশার পরিমাণটাই বেশি পেয়েছি। এরকম ঠিক আমার নানু ভাই, এসএসসি পরীক্ষার আগে দোয়া নিতে গেলাম, নানা বললো- পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে তোমাক একটা সাইকেল কিনে দিবো ঈদ পর। সেখানেও অনেক আশা করে ছিলাম। অবশেষে সেটাও পাইনি। যাই হোক, সবমিলে দেখেছি যে, জীবনে যেখানেই আশা করেছিলাম কোনোকিছুর প্রতি, সেখানেই ঠকেছি। আসলে মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নিয়ে সত্যিই নিজেকে অনেক কষ্ট পেতে হয়। সবশেষে ভেবেছি, আর আশা কথাটার ভিতরে নাই, কোনোকিছুর প্রতি আর ঐভাবে অাশা করে থাকবোনা। নিজের সক্ষমতায় কিছু কিনতে দাড়াতে চাই। এতে কষ্ট হলেও নিজেকে বুঝাতে পারবো। যে আশা থেকে হতাশার রুপ নেয়, তা থেকে দূরে থাকাই ভালো। অন্যের উপরে নির্ভরশীল হতে আর রাজি নই। নিজের পথ নিজেকেই খুজতে হবে। আসলে অাশা করে থেকে না পেয়ে কষ্ট পাওয়াটা সত্যিই যন্তনায়ক। উপরে ভরষা করে থাকতে আর রাজি নই। সে যতোই আপন হোক।
ধন্যবাদ
অনিমেষ কাকু একবার অনেকগুলো মাছ ধরে ছিলো, তার মাছ গুলো দেখে আমার মাছ ভাজা খাওয়ার ভীষণ ইচ্ছা জাগল। আমি নিজের লোভ না সামলাতে পেরে, অনিমেষ কাকুকে বলেই ফেললাম, কাকু আমাকে একটু মাছ ভাজা খেতে দিবা । অতঃপর অনিমেষ কাকু বললো, খোকা তোমার যদি মাছ ভাজা খাওয়ার এতই ইচ্ছা থাকে, তাহলে আমার বড়শি ধার নিতে পারো ।।।
পৃথিবীটাই এমন। সব মানুষরাই এমন। তবে এ থেকে পরিবর্তন না আসলে পৃথিবীর অবস্থা অনেক করুন হবে।
মানুষ মানুষের জন্য হওয়া উচি, ধর্ম কখনো কাউকে এগুলো শিক্ষা দেয়না।
Congratulations @yeakub50! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
ভালো লাগলো।
আশা সব সময় নিজের সামর্থের উপরেই করতে হয়। তবে কাজ কারার বিনিময়ে কোন কিছু আশা করাটা খারাপ কিছু নয়।
আমাদের সমাজে এমন হাজারো কাকা আছে। শ্রমের মূল্য দিতে কষ্ট হয় তাদের।
হ্যা ভাই। মাঝে মাঝে এগুলো অতীত মনে পড়ে যায়। খারাপ লাগে ভাবলে।
যখনেই এইসব মনে পরবে তখনেই মুচকি হাসি দিবেন। দেখবেন ভালো লাগবে।