চীনের নবজাগরণ (২য় অংশ)

in #emerging7 days ago

১৯৭৬ সালে মাও সে তুং এর মৃত্যুর পর দেং জিয়াওপিং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে। আধুনিক চীনের অর্থনৈতিক রূপকার হিসেবে খ্যাত দেং জিয়াওপিং ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। দেং জিয়াওপিং ১৯৮২ চীনের সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনেন। যার মধ্যে একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি চীনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে না এটি ছিল অন্যতম। স্বৈরতন্ত্র থেকে চীনের জনসাধারণকে বাঁচানোরএই চেষ্টা ২০১৭ সালে ধূলিসাৎ হয়ে যায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন সংবিধান পুনঃরায় পরিবর্তন করে নিজের আজীবন রাষ্ট্রপ্রধান থাকার একমাত্র সাংবিধানিক বাঁধাকে অতিক্রম করেন।

images (14)_1620516240032.jpeg

বিশেষজ্ঞরা চীনের সাবেক কমিউনিস্ট নেতা ও প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং এর সাথে প্রেসিডেন্ট শি এর এমন স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবকে তুলনা করেছেন। মাও সে তুং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে গণচীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিন্ত পরবর্তীতে চীনকে আধুনিকায়নে গ্রেট ফরওয়ার্ড লিপ (১৯৫৮-১৯৬২) ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের (১৯৬৬) মতো গৃহীত পদক্ষেপ, প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তেমনিভাবে উইঘুর, তাইওয়ান ও হংকং এ মানবাধিকার লঙ্ঘনেও তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই চীনের। বরং চীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই এসব অঞ্চলে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।

images (8)_1620416101074.jpeg

কমিউনিজমকে চৈনিক ধারায় এক সংস্কৃত রূপ দিয়েছিলেন মাও সে তুং, যা বহুল প্রচলিত "কমিউনিজম উইথ চাইনিজ ক্যারেক্টারিস্টিকস" নামে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট শি বেইজিং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন "শি জিনপিং রিসার্চ সেন্ট্রার ফর ডিপ্লোম্যাটিক থট"। প্রেসিডেন্ট শি এর কূটনৈতিক মতবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রথাগত তত্ত্বকে ছাড়িয়ে একুশ শতকের মার্কসবাদকে বাস্তবে রূপ দান করেছে এবং এই মতবাদই চীনা কূটনীতির চূড়ান্ত নীতিমালা বলে অভিহিত করেছেন চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট শি চীনে মাও এর মত মার্কসবাদের সঙ্গে তার নিজস্ব মতাদর্শ মিশিয়ে এক নতুন ধরণের কমিউনিজমের প্রচলন করেছেন এবং এর মাধ্যমে মাও এবং দেং জিয়াও পিং এর পরে এখন শি জিনপিং এর আদর্শও চীনের গঠনতন্ত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে জায়গা করে নিলো।

images_1620516403612.png

প্রেসিডেন্ট শি একই ধারা বজায় রেখেছেন ঠিক যেমনটা দেং জিয়াওপিং ক্ষমতায় এসে অর্থনীতি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্কের যেই মুক্তধারা তৈরি করেছিলেন। প্রমাণ স্বরূপ বি আর আই (বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) প্রকল্প এবং তা বাস্তবে রূপ দিতে সকল অবকাঠামোগত উদ্যোগ গুলোর দিকে তাকালেই তা পরিষ্কার। তাই বলা যায় প্রেসিডেন্ট শি চীনের ক্ষমতায় শুধুমাত্র মাও এর প্রতিচ্ছবি নয়, বরং অনেকটা মাও সে তুং এবং দেং জিয়াও পিং উভয়েরই সংমিশ্রণ।