একটি সবিশেষ নাটকীয় ফগান বধের কথা [ ১-০ টি- টোয়েন্টি সিরিজ লিড ]

in BDCommunitylast year

নাটকের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখতে হয় আর বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় নাটকের জন্য খেলোয়াড়রাই যথেষ্ট। তামিম ইকবালের অবসর গ্রহণের পর আফঘানিস্তানের কাছে হাতছাড়া হয়ে যায় ওডিআই সিরিজ। ক্রিকেটের শক্তিমত্তার দিক থেকে বাংলাদেশ কয়েক যোজন বোধহয় এগিয়ে থাকবে দলটির দিক থেকে, কিন্তু খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আফঘান ক্রিকেট বেশ উন্নতি করেছে,বড় দলগুলোকে হারাতে শিখেছে সে বিষয়টা খুব সহজে অস্বীকার করতে পারবে না কেউ, এটা ঘোর সত্য।

এদেশীয় ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডবদের ছাড়া মেরুদন্ডহীন একটি দলে বাংলাদেশ পরিণত হয় তার প্রমাণ আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণ, দীর্ঘ একটা সময় ধরে ক্রিকেট খেলা দেখা,বিভিন্ন গুণীজনের মতামত, ক্রিকেটবোদ্ধাদের বিশ্লেষণ কাছ থেকে বিবেচনায় নিয়ে টাইগারদের ভাঙা -গড়া, পারফরম্যান্সের উত্থান পতন, কখনো চালচুলোবিহীন দলে পরিণত হয়ে যাওয়া কিংবা ক্ষনিকের জন্য অপ্রত্যাশিত অর্জনে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া - এসবই বোধ করি বিগত একটি দশকের মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়বে মোটাদাগে।

Source

আমার ভাবতে খুব অবাক লাগে যে, এদেশীয় ক্রিকেটের কি হাল হবে যদি পঞ্চপান্ডবরা ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে শুরু করে। প্রত্যেকটি ব্যাক্তিগত ক্যারিয়ারের শুরু এবং শেষ আছে, নক্ষত্রেরও একদিন নিঃশেষ হয়ে যেতে হয়, হয়তো জীবনানন্দ একদিন খুব গভীরতর উপলব্ধি থেকে বলেছে, কিন্তু তার সাবলীল প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একাদশে। একসময় সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, মাশরাফিরা দলে ন থাকলে স্কোয়াডটাই অসম্পূর্ণ মনে হতো৷ কিন্তু এখন সময় বদলেছে,স্কোয়াডেরও অনেক রং বদলেছে।

কেন জানি আজকের প্রথম টি টোয়েন্টি ম্যাচের বাংলাদেশের একাদশটা দেখে মনে হলো কি যেন নেই। নতুনরা এসে পুরনোর জায়গা দখল করে নিয়েছে, অভিজ্ঞতার বদলে নবপ্রতিভারা নিজেদের আলো মেলে ধরেছে। কিন্তু, অভিজ্ঞতা যা শেখায় তা শত সহস্র প্রতিভা ধরতে পারে না, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উদ্ধার করতে পারে না। যা হোক, আজকের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটায় তার এপিঠ ওপিঠ দুটোই চলে এসেছে খুব সুন্দরভাবে। যদি না পরিবেশটা আরেকটু সাদামাটা হতো,একটি ম্যাচ জয়ের আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা করে দিতে পারতো। কিন্তু নাটকীয়তা, ডুবতে ডুবতে উদ্ধার পাওয়ার মধ্যে যে রোমাঞ্চ, সেটা অন্য কিছুতে কখনো হবে না।

লিটন দাসের ব্যাপারে কিছু কথা না বললেই নয়, তার পারফরম্যান্সের ব্যাপারে, সহজাত প্রতিভার ব্যাপারে কেউ হয়তো প্রশ্ন তুলতে বেগ পেতে হবে,কিন্তু আদত যেটা সবচেয়ে বেশি তার ক্যারিয়ারকে মেলে ধরতে পারে নি বিগত ৫টি বছর ধরে তা হলো, একটি ইনিংসকে গুছিয়ে নেয়ার ক্ষমতা। আমি যেটা মনে করি, লিটন দাস যে ম্যাচের অবস্থা পড়তে পারে না তা নয়, সে পূর্ণাঙ্গ একটি ব্যাটারের মৌলিক যে গুণ - বলের "মেরিট" অনুসারে খেলে স্কোর বড় করতে পারে না। এটাই তার বড় ব্যার্থতা যেটা তার উজ্জ্বল ইনিংসগুলোর সুপ্ত সম্ভাবনাকে গুটিয়ে এনেছে, আজ যেভাবে সে আউট হলো তার মোক্ষম কারনও সেটা।

তৌহিদ হৃদয় খুব একটা ধৈর্য্য আর সংবেদনশীলতা নিয়ে আজকের ম্যাচটার এংকর ইনিংস খেলেছে, যা বাংলাদেশকে ১৫০+ রান তাড়া করতে সাহায্য করেছে, বাংলাদেশের জয়েট পেছনে এ ইনিংসটার বড় অবদান। নজরুল তার প্রলয়োল্লাস কবিতাটায় একটা শ্লোক বলেছে যা বারবার আজ তার ইনিংসটা দেখে মনে পড়ছে,

ভেঙে আবার যে গড়তে জানে সে চির -সুন্দর !

কথাটার ধ্বনি মনপ্রাণ জুড়ায়ে তোলে, সত্যিই তো আউট হতে যাওয়া তৌহিদ হৃদয় গড়ে তুলেছে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম জয়। যা পরবর্তী ম্যাচটাও জিতে আফঘান বধ করতে বাংলাদেশকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ইদানীং তাদের দর্প, অহংকার, গুটিকতক খেলোয়াড়দের চলন বলন বলে দেয়, যদিবা অহংবোধে নিজেকে স্বয়ং সরা জ্ঞান করেছ, তো তোমার পতন কেউ না নিবারে। সময় হয়তো সেই কথা বলে দিবে, তবে তাদের অর্জন তাদেরই,এবং বাহবাটুকুও প্রাপ্যের খাতায় চলে আসবে।

Source

নাটকের শেষ অঙ্কে ক্লাইম্যাক্স থাকে, শেষ ওভারে এসে যখন ৫ বলে ২ রান দরকার, তখন ঘুরে ঘুরে মনে পড়ে যায় রাংওয়ালী রাং বারসে, সেই ২ বলে ১ রানের কথা ভারতের বিপক্ষে যা একই পরিবারে বিয়ে করা দুই সতীর্থ খেলোয়াড় মুশফিক -মাহমুদউল্লাহ ছক্কা মেরে অক্কা পেয়ে কিছুকালের জন্য সর্বনাশের গুড়ুম গুড়ুম নিয়ে আসলো জনমানুষের জন্য। এবারোও মেহেদী মিরাজ যখন, ৫টি বল বাকি লাগে কেবলি ২ টি রান,তখন কাবুলিদেরকে নিজের উইকেট দিয়ে আসলো বাউন্ডারি মারতে গিয়ে।

তারপর ফগানওয়ালা বোলার পরপর দুই উইকেট নিয়ে হ্যাট ট্রিক করে বসলো, লাগে ২ বলে ২। হয়তো, কম কিছু গালমন্দ পড়ে নি দর্শকদের পক্ষ থেকে এমন আহাম্মকির সেলামির জন্য। ম্যাচটা হারতেও পারতো, অপর প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা তৌহিদ চাতকপ্রায় একটি রানের জন্য, শরিফুল এসে চকে মেরে মেজাজটা ঠান্ডা করে দিল ; মহা এক সমালোচনা থেকে সতীর্থদের বাঁচালো, একটি নাটকীয় মন্চায়নের আরেকটি মহাকলঙ্ক থেকে উদ্ধার করলো।
তবু বলবো,

বাঙালী বলিয়া লজ্জা নাই, 😃