সার্টিফিকেট এ বাবা মা এর নাম সংশোধন

in BDCommunity2 years ago

সারটিফিকেট এ নিজের নামের বানান, ডট থাকা বা না থাকা,বাবা মা এর নামের স্পেলিং ঠিক না থাকা অর্থাৎ NID কার্ড এর সাথে মেচিং না হলে কতটা বিরম্বনায় পড়তে হয় তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।
আপনার নিজের,বাবার,মায়ের NIDতে যেভাবে নাম লিখা আছে,আপনার জন্ম নিবন্ধন ও সারটিফিকেট এ ঠিক একই ভাবে নাম লিখা থাকতে হবে। কোন তথ্য ১০০% না মিললে আপনি পাসপোর্ট করতে পারবেন না,বিদেশে লেখাপড়ার জন্য এপ্লিকেশন করতে পারবেন না।তাই যখনই কোন কিছু নতুন করতে যাবেন,পরিবর্তন করবেন খুব সাবধানে তথ্যগুলো লিখবেন এবং কয়েকবার চেক করে নিবেন।
মনে রাখবেন,একবার ভুল হয়ে গেলে সংশোধন একটি জটিল প্রক্রিয়া। শুধু কি জটিল? যেমন সময় নস্ট তেমন অনেক টাকা ও খরচ হয়ে থাকে।
জন্ম সনদ থেকে এই সংশোধন এর কাজ শুরু করতে হয়। তাই আগে থেকে যা করবেন সাবধানে বুঝে শুনে করতে হবে।
যখন বাংলাদেশে প্রথম NID কার্ড প্রদান করা শুরু হয় তখন অল্প শিক্ষিত টাইপ জানা টাইপিস্ট দিয়ে কাজ করানো হয়। এছাড়া আমাদের মুখে বলা তথ্য দিয়েই ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রদান করা হয়। এতে নামের স্পেলিং আমাদের সারটিফিকেট এর মতো হয়নি।বাবা মা এর নামের স্পেলিং,উপাধি ইত্যাদি গরমিল রয়ে গেছে, অনেকের নাম ও উলটা পালটা আছে এবং সেই ভাবেই সব দাপ্তরিক কাজ করা হয়েছে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন সব কিছু এক রকম না হলে নানান জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
যেমন,আমার নাম আমার সারটিফিকেট এ আছে- মোঃ আক্তাজ্জামান পাটোয়ারী,যখন NID করা হয় তখন লিখেছি- মোঃ আখতার উজ জামান,ঠিক এই স্পেলিং এ জন্ম সনদ ও করা হয়েছে। যখন আমার সন্তান এর জন্ম সনদ করা হয় তখন স্টাইল করে আমার নাম লিখে দেই- মোঃ আখতার-উজ-জামান। আগে আমরা সবাই জানতাম নামের বানানে কোন ভুল নাই, যেভাবে লিখা হয় সেটাই সঠিক। আর এভাবেই হয়ে যায় তার ক্লাশ ফাইভ, ক্লাশ এইট, এসএসসি ও এইচএসসি সনদ।
এখন যখন তার পাসপোর্ট করার জন্য সকল ডকুমেন্টস জমা দিতে হলো, দেখা গেল আমার NID এর সাথে তার সারটিফিকেট এর সাথে নামের স্পেলিং মিলছে না,আবার তার এনআইডি সাথে মিল আছে, যেহেতু NID* পরে করা আর এই কারনে তার সারটিফিকেট এ আমার নাম সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
ইউটিউবে খুজে ভিডিও দেখলাম ঘরে বসেই এপ্লিকেশন করে কারেকশন করা যায়।ওয়েবসাইট https://dhakaeducationboard.gov.bd এ ডুকে এপ্লিকেশন করতে পারলাম না। যেহেতু আমার ছেলে ঢাকা বোর্ডের ছাত্র তাই গেলাম ঢাকা বোর্ডের কন্ট্রোলার এর সাথে দেখা করে জানলাম বাসা থেকে এখন আর কোন আবেদন করা যায় না। যে স্কুলে লেখাপড়া করেছে সেই স্কুল থেকে আবেদনে করতে হবে। গেলাম তার স্কুলে। সকুল কর্তৃপক্ষ এই সম্পর্কে কিছুই জানে না। কি আজব আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবচাইতে পরিতাপের বিষয় যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ এর শিক্ষার কারিগর তারাই বোর্ডের সারকুলার পেতে দেরি করে। কোন কিছুর তথ্য প্রকাশিত হলে ৫/১০ মিনিটে সবার মেইলে তা দিয়ে দেয়ার কথা। আমার ছেলে SSC পাশ করেছে সিভিল এ্যাভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। স্কুলের কর্তৃপক্ষ আমাকে আগের নিয়মের কথা বলে দিলেন আমি বোর্ডের নতুন নিয়ম এক কথা জানালাম। তারা আমার মোবাইল নাম্বার রেখে দিলেন এবং পরে জানাবেন বলে দিলেন। তারা আমাকে কল করেননি। তাই ২০ দিন পর আবার স্কুলে গেলাম। তারা স্কুল পরিচালনা কমিটির মিটিং করেননি তাই এই আবেদন এর জন্য কত টাকা স্কুল নিবে তা নিরধারন করা হয়নি।আগামী সপ্তাহে আসেন বলে দিলো।
পরের সপ্তাহে একজন শিক্ষককে কল দিয়ে জানলাম এই এপ্লিকেশন এর জন্য ২০০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। কেন ফি লাগবে? কারণ একজন অপারেটর নাকি দুইশত টাকার সম সময় নস্ট করে একটি আবেদন করার কাজে।কি বিচিত্র আমাদের দেশ আমাদের চিন্তা চেতনা। তাহলে সেই অপারেটর কি স্কুল থেকে বেতন নেয় না?
এদিকে মেয়ের সারটিফিকেট কারেকশন করতে হবে। গেলাম মেয়ের স্কুলদঃক্ষিনখান গার্লস হাই স্কুল এ।হেডমাস্টার সাহেব এর কাছে গিয়ে বললাম। তিনি বল্লেন-'আমি কি করবো? অফিসে গিয়ে কম্পিউটার অপারেটর কে বলেন করে দিবে।'
গেলাম কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারীর কাছে, গিয়ে বললাম আমার নাম এর ভিতর স্পেলিং এ মেয়ের সারটিফিকেট ভুল আছে সংশোধনের আবেদন করতে হবে।সে বল্লো এটা বাসায় বসে বা যে কোন কম্পিউটার এর দোকানে গেলেই তারা করে দিবে। তাকেও নিয়ম চেঞ্জ এর কথা বুঝিয়ে বলতে হলো। সে ওয়েব সাইট এ ডুকে দেখলো আসলেই তাই। সে আমাকে ডকুমেন্টস স্কেন করে পিডিএফ ফরমেটে পেন ড্রাইভে করে আনতে বলেদিলো।
পরের দিন আমি তার জন্ম সনদ,ছবি আমার NID পিডিএফ করে নিয়ে গেলে পাচ মিনিটে কাজটি করে দেয়।এপ্লিকেশন করা হয়ে গেলে আমার মোবাইলে একটি কোড নাম্বার ও পাসওয়ার্ড আসে।তখন সেই নাম্বারে ডুকে কারেকশন ফি এর জন্য বোর্ডের একাউন্টে ৫০০ শত টাকা জমা দিতে হয়েছে।যেহেতু তার শুধু SSC এর একটি সারটিফিকেট কারেকশন করতে হবে। সেটা বিকাশে জমা দেয়ার জন্য খরচ হয়েছে ৫০৭.৫০ টাকা।আর ব্যাংকে জমা দিলে দিতে হতো ৫৫৮ টাকা।আর এই কাজের জন্য স্কুলে কোন ফি জমা দিতে হয়নি।

পরের সপ্তাহে গেলাম ছেলের স্কুলে।২০০ টাকা ফি জমা দেওয়ার পর তারা আবেদন টি সাবমিট করে।এপ্লিকেশন করা হয়ে গেলে আমার মোবাইলে একটি কোড নাম্বার ও পাসওয়ার্ড আসে। এখানে জমা দিতে হয় এসএসসি ও এইচএসসি এর জন্য ১০১৫ টাকা।
এই কোড নাম্বার দিয়ে এপ্লিকেশন টি কোন অবস্থায় আছে তা যে কোন যায়গা থেকে দেখা যায়। বোর্ড তা গ্রহন করলে সপ্তাহ পরে আরেকটি মেসেজে প্রেরণ করে। সংশোধন হয়ে গেলে আপনাকে দেওয়া একাউন্ট নাম্বার এ পাসওয়ার্ড দিয়ে ডুকে তা দেখে নিতে পারবেন।

Screenshot 2022-09-27 120650.jpg

বোর্ডের কারেকশন এর কাজ হয়ে গেলে এই ডকুমেন্ট গুলো নতুন করে ফ্রেশ কপি পাওয়ার জন্য আবার প্রতিটি ৫০০ টাকা করে ফি জমা দিয়ে আবার আবেদন করতে হবে।
এতো ঝামেলা এড়াতে জন্ম সনদ তৈরী থেকেই সকল তথ্য সাবধানে এন্ট্রি করতে হবে।জন্ম তারিখের ভুলের ক্ষেত্রে আরো বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই সাবধানে সকল তথ্য লিখবেন কোন কিছুই এলোমেলো করা যাবে না। একটি কথা মনে রাখবেন আপনার জন্ম নিবন্ধন যদি না হয় তাহলে আপনি মৃত্যু সনদ ও নিতে পারবেন না।

ভালো থাকুন। কস্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আখতার উজ জামান
ডিএইচএমএস

তারিখঃ ২৭-০৯-২০২২ ইং
সময়ঃ১১ঃ৪৫ সকাল

Sort:  

বাংলাদেশের এই সংশোধনের সমস্যায় কত মানুষ যে তার কোন হিসেব। বিশেষ করে এনআইডির ক্ষেত্রে। হয়তো কারো নিজের নামে ভুলে এসেছে অথবা কারো বাবার নাম অথবা মায়ের। খুব চোখে পড়ার মতো সংশোধন করার জন্য কত দৌড়াদৌড়ি যে করতে হয় তার কোন হিসাব নেই।

জন্ম সনদ থেকে এই সংশোধন এর কাজ শুরু করতে হয়। তাই আগে থেকে যা করবেন সাবধানে বুঝে শুনে করতে হবে।

আপনি ঠিক বলেছেন, আগে থেকেই সতর্কভাবে কাজগুলো করা উচিত। কিন্তু সাধারণ জনগণ সতর্ক থাকলেও যারা এই কাজগুলোতে নিযুক্ত রয়েছেন তারা কি সতর্ক থাকে? তাদের ছোট্ট ভুলের জন্য আমাদের সবথেকে বেশি সময় নষ্ট হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় শুধুমাত্র তাদের সাথে কথা বলার জন্য এই বিষয় নিয়ে। যদি কথা হয়েও যায় তারপরে এনআইডির নাম্বার সিরিয়াল এগুলা খুঁজতে খুঁজতে তারা আরো কয়েক ঘন্টা সময় লাগায়, এগুলা ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই না।

এগুলো ওরা এখন ইচ্ছে করেই করে,
তাহলে তারা এগুলো কারেকশন করার জন্য কন্ট্রাক্ট করবে।