বাবার বাড়ি

in #shaonashraf7 months ago

কোনো রাজ প্রাসাদ নয়,কোনো বিলাসবহুল সাজানো ভিলা নয়,সাত টিনের ছোট্ট চাপড়াই জন্ম আমার।কোনো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স নয়। গ্রামের অপ্রশিক্ষিত ধাত্রীই ছিলেন মায়ের পাশে।ভাঙা বাড়িতে হেসে খেলে লুটিয়ে পুটিয়ে বড় হয়েছি আমি।তাই মাটি আমাকে টানে।সেই যে কবে ইন্টার পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাড়ি ছেড়েছি। সেটাই যে হবে বাড়ি ত্যাগের দিন কখনো ভাবিনি।

মেয়েরা বিয়ের দিন কাঁদে কেনো? এটা ছিলো আমার জীবনের উত্তর না পাওয়া এক প্রশ্ন।আজ যাচ্ছে তো কি হয়েছে, আবার তো আসবে।যেহেতু এটাই ছিলো আমার ধারণা তাই আমার বিয়ের দিন আমার তেমন কান্না আসেনি।কান্নাটাকে আমার কাছে অভিনয় মনে হতো।কিন্তু বিয়ের পর যখন বাবার বাড়ি গিয়ে কিছু দিন থাকার প্রশ্ন এসেছে, তখন আমি বুঝতে পেরেছি বিয়ের দিন আমাকে মূল থেকে কেটে আলাদা করে দিয়ছে।তাই এখন আমি এখানে আসতে পারলেও এটা আমার বাড়ি আর নেই। যদিও বিয়ের পর বিদেশে থাকার কারণে কখনো বাবার বাড়ি যাওয়া হয়নি তবু্ও আমি বুঝলাম কিভাবে বিয়ে মানে মূল কেটে আলাদা করে দিয়েছে। এটার একটা গল্প বলি।আমার শ্বশুর বাড়ি অনেক দূর।মানে আমি এক বিভাগের মেয়ে বিয়ে হয়েছে অন্য বিভাগে। আমরা দেশে আসবো ভাবছি।

আমি যখন দেশের কথা ভাবি আমার চোখে ভেসে ওঠে কিশোরগঞ্জের দৃশ্য। ঐদিকে আমার শ্বাশুড়ী প্রতি মূহুর্তে বলে কবে আসবা?কবে আসবা?আমাদের থাকার জন্য প্রস্তুতি,খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি।ভাবি এতো বছর পর যাবো আমি আমাদের বাড়িতে থাকবো।কিন্তু তখনই মাথায় আসে মানহার বাবার বাড়িতো সেটা। এটা না হয় বাদ দিলাম। মানহা সে তো কিশোরগঞ্জের মেয়ে নয়।কিশোরগঞ্জ সে বেড়াতে যাবে কিন্তু স্থায়ীভাবে থাকতে তো পারবে না।তাহলে কি হবে?তার মানে আমি চাইলেও আর কিশোরগঞ্জ থাকতে পারবো না।এটা মনে হলে আমার খুব কষ্ট হয়।

আজ চারা গাছের রোপণ পদ্ধতি খুব মনে পড়ছে।নার্সারীতে পলিথিনে মাটি গোবর সার এসব দিয়ে বীচ বপণ করা হয়।এরমধ্যে চারাগাছ বড় হলে তা খুব সহজে বিভিন্ন জায়গায় রোপণ করা যায়।পলিথিনের ভিতরে থাকায় এর মূল মাটিতে পৌঁছাতে পারে না।ফলে সহজে যেকোনো জায়গায় বহন করে নিয়ে রোপণ করা যায়।এতে চারাগাছের কোনো ক্ষতি হয় না।অনেকে বাড়িতে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে।তারা আবার মাটি গর্ত করে তাতে সার গোবর দিয়ে বীজ বপন করে।সেখানে বীজ থেকে চারাগাছ হয়।ধীরে ধীরে মূল চারদিকে ছড়িয়ে যায়।অতী যত্নে সাবলীলভাবে বড় হতে থাকে। তখনই সময় হয় এই জায়গা থেকে সরিয়ে অনত্র রোপণ করার।

তখন চারাগাছ গুলোকে ওঠাতে গিয়ে তাদের মূলগুলো কাটতে হয়।মূল কেটে নিয়ে অনত্র লাগনোর পর প্রথমে মর মর অবস্থা।এরপর আস্তে আস্তে বেঁচে উঠে।এরপর যত সময় যায় তত মানিয়ে নেয় নিজেকে।আস্তে আস্তে আবার নিজের মূল ছড়িয়ে দেয় মাটি থেকে।নিজের অবস্থান শক্ত করে।এখানে শুরু হয় তার দিনযাপন। মনে হয় এটাই তার আদি অনন্ত নিবাস।কিন্তু কোন কারণে যদি তাকে উঠাতে হয় তবে বুঝা যায় যতই মূল ছড়িয়ে নিজের অবস্থান তৈরী করোক এটা ততটা টুনকোই ছিলো।

মেয়েদের জীবনটা গৃহস্থালির বাড়িতে অতি যত্নে বেড়ে ওঠা চারাগাছের মতো।আদর সোহাগ আর অধিকার নিয়ে এমনভাবে বেড়ে ওঠে সে ভাবতেও পারে না এটা তার স্থায়ী ঠিকনা নয়।বিয়ের পর হুঁচোট খায়।ঠিকে থাকতে কষ্ট হয়।কিন্তু ধীরে ধীরে মেনে নেয়,মানিয়ে নেয়।আস্তে আস্তে নিজেকে সেই বাড়িতে নিজের বাড়ি ভেবে নেয়।কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মাঝে মাঝেই স্বরণ করিয়ে দেয় এটা তার বাড়ি নয়।কিন্তু সবাই এমন তা নয়।এমন হয় এটাই বললাম। বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, নিজের বাড়ি সব কিছুর মাঝে বাপের বাড়ি বাপের বাড়িই থেকে যায় মায়া ডোরে। যা চাইলেও খুলা যায় না।

IMG_20240413_180604.jpg

Sort:  

Congratulations @shaonashraf! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)

You published more than 350 posts.
Your next target is to reach 400 posts.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Check out our last posts:

Unveiling the BuzzParty Meetup 2024 Badge